ঐতিহ্যবাহী ক্লাব ব্রাদার্স ইউনিয়নের মাঠ নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ক্লাব কর্তারা। নিজেদের মাঠ সংস্কারে উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে তাতে আপত্তি জানিয়েছে মাঠ ব্যবহারকারী ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব। তাদের দাবি সংস্কারের আড়ালে মাঠ দখলের চেষ্টা করছে ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তারা। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাঠ দখলে নিতে ব্রাদার্স ইউনিয়নের কূটচালে হতবাক সংশ্লিষ্টরা। স্থানীয় ও রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের অনুরোধে এবং দেশের ক্রীড়া উন্নয়নের স্বার্থে ক্লাবটিকে নিজস্ব মাঠ ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে বিপাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। রাষ্ট্রের এ সম্পদটি কয়েক দফা দখলের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে এখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে ক্লাব কর্তৃপক্ষ। বলছেন মৌখিক বরাদ্দের কথা; তবে নেই কোনো প্রমাণ। একই সঙ্গে বাংলদেশ ব্যাংককে ভূমিদস্যু আখ্যা দিয়ে চালাচ্ছে নেতিবাচক প্রচারণা। তবে সরকারি নথিপত্র, বাংলাদেশ ব্যাংকের দলিলপত্র শক্তিহীন রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ এ প্রতিষ্ঠানটি।
নথিপত্র বলছে, জমির প্রকৃত মালিক কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নথিপত্রেও মাঠের জায়গাটি বাংলাদেশ ব্যাংকের নামেই রয়েছে। সরকারি নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায় মোট ১১ একর জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আর কে মিশন রোড সংলগ্ন ৩৮০, ৩৮৮, ৩৮৯ এবং ৩৯০ নং প্লটগুলো এর অংশ। অর্থাৎ বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মচারী নিবাসের পাশে যে মাঠটি রয়েছে তা সরকার কর্তৃক বরাদ্দ দেয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের জমি। সরকারের সঙ্গে চুক্তির শর্ত হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক এককালীন দুই লাখ ৯৯ হাজার ৫৮৬ টাকা ৬৪ পয়সা পরিশোধ করেছে। এরপর প্রাথমিকভাবে প্রতি বছর ১৫ হাজার ৪১১ টাকা এবং পরবর্তীতে সরকার নির্ধারিত হারে খাজনা পরিশোধ করে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
নিজস্ব কোনো মাঠ না থাকায় স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক নেতাদের অনুরোধে মাঠ ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছিল ব্রাদার্স। তবে অনুশীলনের জন্য অনুমতি পেলেও ব্রাদার্সের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে বাণিজ্যিক স্বার্থে মাঠ ব্যবহারের। এ ছাড়া সন্ধ্যা নামতেই মাঠে বসছে মাদকের আড্ডা। তদারকি না থাকায় প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মাঠের অবকাঠামো। নিরাপত্তা নিশ্চিতে এবং মাদকের বিস্তার রোধে লাইট স্থাপনের কাজেও বাধা দিচ্ছে ক্লাবটি। সংস্কারের নামে খেলাধুলা বন্ধের কথা বলে স্থানীয় লোকজনকে উসকে দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে। জানা গেছে, সৌন্দর্য বর্ধনের পাশাপাশি ব্যাংক কর্মকর্তা ও স্থানীয়দের শরীরচর্চার সুবিধার্থে গত মাসের প্রথম দিকে মাঠের চারপাশে ওয়াকওয়ে তৈরির কাজ শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বাধা সৃষ্টি করে ব্রাদার্স ইউনিয়ন। তারা দাবি করে, কাউকে না জানিয়ে হঠাৎ মাঠ দখলের চেষ্টা করা হচ্ছে। খেলাধুলা বন্ধ করতেই এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে; এমন প্রচারণা চালিয়ে স্থানীয়দের উসকে দেয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংককে ভূমিদস্যু আখ্যা দিয়ে ছাপানো হয় ব্যানার।
তাই এই মাঠ নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে ব্রাদার্স ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্রাদার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ মহীর দাবি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মৌখিকভাবে মাঠ বরাদ্দ দিয়েছেন ব্রাদার্সকে। যদিও এর সপক্ষে কোনো প্রমাণ নেই তার কাছে। অপরদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্পদগুলোর রক্ষণাবেক্ষণে বিশেষ পদক্ষেপ নিচ্ছেন তিনি। তাই এবার দেখার বিষয় শেষ পর্যন্ত এই ব্রাদার্স ইউনিয়ন মাঠ নিয়ে কোন সিদ্ধান্ত আসে।