এতো যুগ ধরে বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে রাজ করছিলো ঢাকা আবাহনী। তবে বর্তমানে ঘরোয়া ফুটবলে আবাহনীর একচ্ছত্র আধিপত্য দেখানো রাজ্যে হানা দিয়েছে বসুন্ধরা কিংস নামের নতুন রাজা। শুধু হানা দিয়েছে বললে ভুল হবে রীতিমতো সিংহাসন কেড়ে নিয়ে নতুন আধিপত্য তৈরিতে মরিয়া বসুন্ধরা কিংস। সে চেষ্টায় অবশ্য প্রায় শতভাগ সাফল্যও পেয়েছে দলটি। বিপিএলে আসার পর চারটি মৌসুম পার হলো, চার মৌসুমের কোনোবারেই অন্যদলগুলোকে ট্রফির কাছে ঘেষতে দেয়নি কিংস। বিপিএলের পাশাপাশি জিতেছে স্বাধীনতা কাপ ও ফেডারেশন কাপ।
ঘরোয়া মৌসুমে নিজেদের সাফল্য বিস্তার করলেও দেশের হয়ে আন্তজার্তিক পর্যায়ে ঠিক তেমন একটা কুলিয়ে উঠতে পারছে না বসুন্ধরা কিংস। ইতিমধ্যেই দুইবার এএফসি কাপ খেললেও কিংসের কাছে সাফল্য এসে ধরা দেয় নি। দুইবারই গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়েছে। এবার অবশ্য কিংসের আরো উচ্চ পর্যায়ে লড়াই করার সুযোগ মিলেছে। এবার তারা খেলবে এশিয়ান ক্লাব ফুটবলের সর্বোচ্চ আসর এএফসি চ্যাম্পিয়নস লীগের বাছাইপর্বে।
এএফসি চ্যাম্পিয়নস লীগে বাছাইপর্বে বসুন্ধরা কিংস মুখোমুখি হবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে শীর্ষ ক্লাব শারজাহ এফসির। শারজাহ এফসি ক্লাবটি বর্তমানে আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট কাপ এবং লীগ কাপের চ্যাম্পিয়ন দল।
শারজাহ এফসিকে পরাস্ত করতে হলে বসুন্ধরা কিংসের এটাকিং লাইনয়াপ অনেক দৃঢ় হতে হবে। অবশ্য কিংস অফিশিয়ালরা সেদিকে বেশ ভালোই খেয়াল রেখেছে। তাদের এটাকিং ট্রায়ো রবসন-ডরিয়েলটন-রাকিব এবারের বিপিএলে সর্বমোট ৩৪ টি গোল এবং ১৮ টি এসিস্ট করেছে।
কিংসের মধ্যমাঠের কথা মনে পড়লে প্রথমে মাথায় আসে ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার মিগেল দামাসেনার কথা। কিংসের মধ্যমাঠের প্রাণ এই ব্রাজিলিয়ান মিডি। এছাড়া রয়েছে উজবেক মিডফিল্ডার আশরোর গাফুরভ এবং স্বদেশী তরুণ তুর্কি শেখ মোরসালিন। এই তিনজনের সাথে নতুন করে কিংস শিবিরে যোগ দিয়েছেন আইভোরিয়ান মিডফিল্ডার চার্লস দিদিয়ের।
এটাক এবং মিডফিল্ডের পাশাপাশি ম্যাচে রক্ষণ সামলানোটাও অনেক বেশী জরুরি। কিংসের হয়ে এই দায়িত্ব সামলাবে বেঙ্গল টাইগাররা। শারজাহর আক্রমণভাগ রুখতে তারিক কাজী, বিশ্বনাথ ঘোষ, ইয়াসিন আরাফাত, সাদউদ্দিনদের পাশাপাশি থাকবে কিংসের নতুন আমদানি উজবেক ডুয়ো ববুরবেগ এবং শহরুখ খোলমাতোভ। গোলপোস্টের নিছে গুরুদায়িত্বে থাকবেন সাফে গোন্ডেল গ্লাভসজয়ী গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো।
শারজাহর এফসির বিপক্ষে কিংসের অনুপ্রেরণার উৎস হবে এবারের ঘরোয়া মৌসুম। স্বাধীনতা কাপ এবং বিপিএল জয়ের স্মৃতি তাদের অনুপ্রেরণা জোগাবে।
অন্যদিকে নিজেদের ঘরোয়া ফুটবলে দুর্দান্ত সময় পার করেছে শারজাহ এফসি। লীগ না জিতলেও প্রেসিডেন্ট কাপ এবং লীগ কাপ জিতেছে দলটি। এছাড়া প্রি সিজনেও অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখিয়ে শারজাহ। প্রি সিজনে আরব আমিরাত, রোমানিয়া, কাতার, হাঙ্গেরির শীর্ষ ক্লাবের সাথে বেশ ভালো রকমের লড়াই করেছে।
শারজাহর আক্রমণভাগে নজর দিলে উঠে আসবে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড সাইও এবং স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড পাকো আলকাসার। এই দুই বিদেশী এবারের আরব আমিরাত লীগে সর্বমোট ২৬ গোলে ভূমিকা রেখেছে।
শারজাহর মিডফিল্ড সেকশনে রয়েছে জুভেন্টাস ও বার্সেলোনায় খেলা বসনিয়ান তারকা মিরালেম পিয়ানিচ। পিয়ানিচের সাথে থাকবে ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার লুয়ানজিহো। রক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে রোমা এবং নাপোলির সাবেক গ্রীক ফুটবলার মানোলাস। এই গ্রীক ফুটবলার মূল দায়িত্ব থাকবে কিংসের এটাক লাইনআপকে সামলানো। এছাড়াও আরো বেশ কজন উচুঁমানের বিদেশি ফুটবলার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের জাতীয় দলে খেলা ফুটবলারদের নিয়ে বেশ সমৃদ্ধ স্কোয়াড শারজাহ এফসির। তাইতো নামে ভারে অনেকটাই এগিয়ে থাকা এই দলটির বিপক্ষে জয়ের জন্য সামর্থ্যের সবটুকু নিংড়ে দিতে হবে বসুন্ধরা কিংসের ফুটবলারদের।